Dark Blue Photo Happy Eid Al-Fitr Facebook Cover (4)

সমিতির শরিয়াহ চুক্তি ও বিধান

সমবায় সমিতির পরিচিতি :

“সমবায় হচ্ছে সমমনা ব্যক্তিবর্গের স্বশাসিত সংগঠন যার মাধ্যমে একটি সাধারণ আর্থিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক চাহিদা ও আকাঙ্খা পূরণের লক্ষ্যে যৌথ মালিকানা এবং গণতান্ত্রিক ভিত্তিতে কোন উদ্যোগ ও কার্যক্রম পরিচালনার উদ্দেশ্যে তারা স্বেচ্ছাপ্রণোদিতভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়।” – জাতীয় সমবায় নীতিমালা, ২০০৩

সমিতির শরিয়া চুক্তি :

ব্যবসায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করে না এমন সমিতি : সমিতি যদি শুধুমাত্র সঞ্চয়ের উদ্দেশ্যে গঠিত হয় কিংবা সামাজিক, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য হয়, কোন ধরনের ব্যবসা বা বিনিয়োগমূলক কার্যক্রম না করে, তবে তা ‘শিরকাতুল মিলক’। শিরকাতুল মিলকের যাবতীয় বিধান এখানে কার্যকর হবে।

ব্যবসায়ী কার্যক্রম পরিচালনাকারী সমিতি : আর যদি সমিতি কোন প্রকার বিনিয়োগ বা ব্যবসায়ি কার্যক্রম পরিচালনার উদ্দেশ্যে হয় (সাথে অন্যান্য উদ্দেশ্যও থাকতে পারে), তবে তা ‘শিরকাতুল আকদ’ (শিরকাতুল ইনান)। শিরকাতুল ইনানের যাবতীয় বিধান এতে কার্যকর হবে।

সমিতির বিধান :

একটি ব্যবসায়ী কার্যক্রম পরিচালনাকারী সমিতির বিধান নিম্নরূপ –

১. সদস্যদের পরস্পরের চুক্তি :

১.১. ব্যবসায়ি কার্যক্রম পরিচালনাকারী সমিতির সদস্যদের পরস্পরের চুক্তি, ‘শিরকাতুল ইনান’।

১.২. সমিতির কিস্তি প্রদান শিরকাত চুক্তির র‘সুল মাল হিসাবে ধর্তব্য হবে।

১.৩. প্রফিট বণ্টন র‘সুল মাল এর পার্সেন্ট অথবা পরস্পরের সম্মতি অনুযায়ী যেকোন হারে হতে পারে।

২. পরিচালনা পদ্ধতি :

২.১. সমিতির কার্যক্রম ও ব্যবসা পরিচালনার জন্য পরিচালক কমিটি গঠন করা যাবে।

২.২. পরিচালনা কাজের বিনিময় হিসাবে পরিচালকদের জন্য অতিরিক্ত লভ্যাংশ নির্ধারণ করা যাবে। সেক্ষেত্রে সমিতির সদস্যদের লভ্যাংশ র‘সুল মালের পার্সেন্ট হিসাবে থাকবে না।

উদাহরণ : একটি সমিতির ১০ জন সদস্য ১০০ টাকা করে দিয়েছে। যদি সকলের জন্য ১০% করে লভ্যাংশ বণ্টনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, তবে তা র‘সুল মালের পার্সেন্ট হিসাবে হলো। কিন্তু এমন যদি হয় যে, ২ জন পরিচালক আছে তাদেরকে অতিরিক্ত লাভ হিসাবে আরো ৮% বৃদ্ধি করে ১৮% করে দেয়া হলো, তাহলে ২ জনের হবে মোট ৩৬%। লভ্যাংশের বাকি থাকবে ৬৪%। যা বাকি ৮ সদস্যের মাঝে ভাগ করে দিলে প্রত্যেকে পাবে ৮% করে।

২.৩. লভ্যাংশ সমান রেখে পরিচালনা কাজের জন্য নির্দিষ্ট পারিশ্রমিক ধরে ভিন্ন চুক্তিতে পরিচালক নিয়োগ দেয়াও বৈধ আছে। সেক্ষেত্রে পারিশ্রমিক সমিতির খরচ হিসাবে গণ্য হবে। তবে এক্ষেত্রে পূর্বোক্ত পদ্ধতিটিই উত্তম। সদস্যদের কারো জন্য পারিশ্রমিক নির্ধারণ করা উচিত নয়; যদিও তা ভিন্ন চুক্তিতে হয়।

৩. বিনিয়োগ পদ্ধতি :

৩.১. সমিতি সকলের সম্মতিতে মুদারাবা, মুশারাকা, মুরাবাহা, ইজারা ইত্যাদি শরীয়াহ সম্মত যেকোনো বিনিয়োগ পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারে।

৩.২. তবে উচিত হলো একান্ত প্রয়োজন ছাড়া মুদারাবা, মুশারাকার বাইরে না যাওয়া। সেই মুদারাবা, মুশারাকা ফাইন্যান্স সদস্যদের সাথেই হতে পারে। সদস্যদের যাদের ব্যবসার জন্য ফাইন্যান্স প্রয়োজন তারা সমিতি থেকেই মুদারাবা, মুশারাকার ভিত্তিতে ফাইন্যান্স নিতে পারবে। (মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যাহ, ধারা ১৩৭৯, আলমাআইরুশ শারইয়্যাহ, ধারা ৩/১/৩/৫, মুস্তানাদসহ)

৩. প্রফিট বের করা হবে যেভাবে :

৩.১. প্রতি মেয়াদের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত (সাধারণত এক বছর) যতগুলো বিনিয়োগ সূচনা করা হয়েছে তার একটি তালিকা করবে।

৩.২. এর মাঝে যেসব বিনিয়োগের মেয়াদ সমাপ্ত হয়েছে তার প্রফিট হিসাব করবে।

৩.৩. যেসব বিনিয়োগের এখনো মেয়াদ সমাপ্ত হয়নি, বরং চলমান আছে তার একটি হুকমি (তথা বিনিয়োগকৃত পণ্যের ক্রয় মূল্য ও বাজার মূল্য তুলনা করে সম্ভাব্য লাভ বের করে) সমাপ্তি টানবে এবং সম্ভাব্য প্রফিট হিসাব করবে।

৩.৪. সমাপ্ত বিনিয়োগের প্রফিট ও হুকমি সমাপ্ত বিনিয়োগের প্রফিট যোগ করে বের করা হবে চলমান মেয়াদের শিরকাত ব্যবসার মোট প্রফিট।

৪. প্রফিট বণ্টন পদ্ধতি :

৪.১. মোট প্রফিট থেকে প্রথমত যাবতীয় খরচ বিয়োগ করে নীট প্রফিট বের করবে।

৪.২. নির্দিষ্ট কোন পার্সেন্ট রিজার্ভ রাখার সিদ্ধান্ত থাকলে তা রিজার্ভ হিসাবে আলাদা করে রাখবে।

৪.৩. এরপর বাকি লভ্যাংশ চুক্তি অনুযায়ী সদস্যদের মাঝে পার্সেন্ট অনুযায়ী বণ্টন করবে।

৪.৪. কোন সদস্য বছরের মাঝে নতুন করে যুক্ত হলে তার প্রফিট বণ্টন পদ্ধতি হলো- সমিতির মূলধনকে নির্দিষ্ট অংকে ছোট ছোট ইউনিটে ভাগ করবে; যেমন ১০০, ৫০০ বা ১০০০ টাকা একেকটি ইউনিট (সমিতির হিসাবের সুবিধা অনুযায়ী)। একইভাবে সমিতির চুক্তির মেয়াদকেও ছোট ইউনিটে ভাগ করবে; যেমন এক বছরকে ৬, ১২ বা ২৪ ইউনিটে। এরপর হিসাব করবে, সমিতির সমুদয় মূলধনের ১ ইউনিটের বিপরিতে সময়ের ১ ইউনিটে চলমান মেয়াদে মোট কত টাকা মুনাফা হয়েছে। এরপর দেখবে চলমান বর্ষে বা মেয়াদে যিনি মাঝে যুক্ত হয়েছেন, তার কত ইউনিট টাকা চলমান চুক্তির কত ইউনিট সময় বিদ্যমান ছিল। এরপর সমিতির মূলধনের ১ ইউনিটের বিপরিতে সময়ের ১ ইউনিটে চলমান চুক্তিতে যত টাকা করে মুনাফা এসেছে, তাকে গুণ দিবে চলমান বর্ষে বা মেয়াদে যিনি মাঝে যুক্ত হয়েছেন তার সময়ের ইউনিট দ্বারা। যে ফলাফল আসবে, সেটিই তার চলমান চুক্তির মুনাফা।

৫. রিজার্ভের টাকা কী করা হবে :

৫.১. প্রত্যেক বছরের রিজার্ভের টাকা ঐ বছরের প্রত্যেকের লভ্যাংশের পার্সেন্ট অনুযায়ী তাদের মালিকানাধীন সম্পদ হিসাবে থাকবে।

৫.২. কেউ চুক্তি থেকে বের হয়ে গেলে পূর্ববর্তী জমা থাকা রিজার্ভের টাকা সে ফেরত পাবে।

৬. বছরের মাঝে কেউ বের হয়ে গেলে কী করণীয় :

৬.১. বছরের মাঝে কেউ বের হয়ে গেলে বিভিন্নক্ষেত্রে সমিতি ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এর সমাধান কল্পে সমিতির চুক্তির সময় এ ধরনের শর্তারোপ করা বৈধ আছে যে, চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কেউ বের হয়ে গেলে খণ্ডিত মেয়াদে প্রাপ্ত তার প্রফিটের অংশ সমিতির চ্যারিটি ফান্ডে দান করে দিতে বাধ্য থাকবে।

৬.২. চ্যারিটি ফান্ডের টাকার মালিক সমিতি হবে না। সমিতি তা বৈধ কল্যাণমূলক খাতে ব্যয় করবে।

[সমাপ্ত]

লিখেছেন : মুহাম্মদ সানাউল্লাহ (CSAA)
তারিখ : ০৭/০৫/২৫ ইং

Share:

Facebook
Twitter
Pinterest
LinkedIn
Scroll to Top