মুমিনের জীবনে পবিত্রতার বার্তা নিয়ে আসে মাহে রমযান। মাহে রমযান পবিত্রতার মাস। অস্বচ্ছতা থেকে পবিত্রতার মাস। ধোঁকা ও প্রতারণা থেকে পবিত্রতার মাস। জুলুম ও অন্যায় থেকে পবিত্রতার মাস। এ মাস পরকালের ব্যবসার মাস। আখেরাতের পাথেয় গোছানোর মাস। কিন্তু আমাদের অনেকের জীবনে রমযান আসে ভিন্ন বার্তা নিয়ে। আমরা রমযানকে দুনিয়ার ব্যবসার সবচেয়ে বড় মৌসুম বানাই। সম্পদ উপার্জনের মোক্ষম সুযোগ মনে করি। রমযানের পবিত্রতার বার্তাকে পেছনে ঠেলে দিয়ে অন্যায় ও জুলুমের পথকে বেছে নেই।
রমযান এলেই আমাদের অনেকের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। সারা বছর যে কামাই হয়নি, রমযানে তা হাসিল করার চেষ্টা করি। সবজি বিক্রেতারা সবজির দাম বাড়িয়ে দেই। ফল বিক্রেতারা ফলের দাম বাড়িয়ে দেই। প্রতিটি পণ্য চলে যায় ক্রেতা সাধারণ ও রোজাদারদের নাগালের বাইরে। যার ফলে স্বাচ্ছন্দ্যে সাহরি ইফতার করার তাওফীক অনেক পরিবারের হয়ে উঠে না। রমযান এলেই দৈনিক পত্রিকাগুলোতে ‘রোজার পণ্যে অগ্নিমূল্য, অসহায় ভোক্তা’, ‘গরু ও মুরগির মাংসের দাম নাগালের বাইরে’, ‘রোজায় অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার’, ‘ছোট তরমুজ পিস ৮০, কেজি ৯০’ ইত্যাদি শিরোনামগুলো চোখে পড়ে। নানান ধরনের সিন্ডিকেট আর ধোঁকা প্রতারণার সয়লাব দেখা যায় রমযানকে কেন্দ্র করে।
একই দৃশ্য দেখা যায় মার্কেট, শপিং মল আর বিপণী বিতানগুলোতেও। খুব জাঁকজমক আর বাহারি আইটেমে সাজিয়ে তোলা হয় রমযানের প্রথম দিন থেকেই। চলতে থাকে এক অদম্য ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা গোটা রমযান মাস জুড়ে। ব্যবসার জন্য ছাড়া হয় নামায, ছাড়া হয় তারাবি। ছাড়া হয় এই পবিত্র মাসের ইবাদতগুলো। এমনকি রোজা পর্যন্ত ছেড়ে দেন অনেক ব্যবসায়ি। সেই সাথে আছে ধোঁকা, প্রতারণা। কথায় কথায় মিথ্যা বলা। ক্রেতা সাধারণকে কথার ফাঁদে ফেলে আলোর ঝলক দেখিয়ে বোকা বানিয়ে অতিরিক্ত মূল্যে পণ্য বিক্রি করা।
বিশেষ করে রমাদানের শেষ দশকে। যখন আল্লাহর রহমতের অবারিত বারিধারা বর্ষিত হতে থাকে। যখন পুরো পৃথিবী আল্লাহর দয়ার চাদরে আবৃত হয়। যখন আল্লাহ তার বান্দাদের জন্য সারা বছরের শ্রেষ্ঠ উপহার হাজার রাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ রাতটি দান করেন। যখন সময় আসে নাওয়া খাওয়া ভুলে গিয়ে আল্লাহর দরবারে লুটিয়ে পড়ার। তখন একদল ব্যবসায়ী নিমজ্জিত থাকে দুনিয়ার সম্পদ উপার্জনে। ঈদের বাজার থেকে বছরের সর্বোচ্চ মুনাফা উঠিয়ে নিতে নির্ঘুম রাত কাটে। রাত্রী জাগরণ হয়, কিন্তু রবের দরবারে একটি সিজদা দেয়ার তাওফীক হয় না।
পবিত্র রমাদানে ইবাদাতের শ্রেষ্ঠ মৌসূমে ব্যবসার এই মিথ্যা প্রতিযোগিতা মুমিনের জীবনে কিছুতেই কাম্য নয়। ব্যবসা ভালো, ব্যবসা বরকতময়। ব্যবসাকে আল্লাহ তাআলা বরকতময় পেশা বানিয়েছেন। এতে রেখেছেন মুমিনের জন্য অফুরন্ত বারাকাহ ও হালাল রিজিক। তবে শর্ত হলো, এই ব্যবসা হতে হবে নৈতিক ব্যবসা। ব্যবসা হতে হবে সৎ ব্যবসা। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সৎ ব্যবসায়ির মর্যাদা বর্ণনা করে বলেছেন,
التَّاجِرُ الصَّدُوقُ الأَمِينُ مَعَ النَّبِيِّينَ، وَالصِّدِّيقِينَ، وَالشُّهَدَاءِ
অর্থ : সত্যবাদী, আমানতদার ব্যবসায়ী জান্নাতে নবীগণ, সিদ্দিকগণ এবং শহীদগণের সাথে থাকবে। -সুনানে তিরমিযী, হাদীস ১২০৯ (হাদীসটি হাসান লি গায়রিহী। ইমাম তিরমিযি হাসান বলেছেন)
এ মর্যাদা তাদের জন্যই যারা ব্যবসায় নৈতিকতা রক্ষা করবে। যারা ব্যবসার পাশাপাশি আল্লাহর হকসমূহও যথাযথ আদায় করবে। তাই ব্যবসায়ী ভাইদের উচিত রমযানে ব্যবসার ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখা।
হালাল ব্যবসা নিশ্চিত করা
ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রথম কর্তব্য হলো, হালাল ব্যবসা নিশ্চিত করা। হাদীসে এসেছে, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা পবিত্র, তিনি পবিত্রতা ছাড়া কোন কিছু গ্রহণ করেন না।”[1] অন্য এক হাদীসে এসেছে, হযরত আবু বারযা আসলামী রা. থেকে বর্ণিত, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
لَا تَزُولُ قَدَمَا عَبْدٍ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَتَّى يُسْأَلَ عَنْ عُمُرِه فِيمَ أَفْنَاهُ، وَعَنْ عِلْمِه فِيمَ فَعَلَ، وَعَنْ مَالِه مِنْ أَيْنَ اكْتَسَبَه وَفِيمَ أَنْفَقَه، وَعَنْ جِسْمِه فِيمَ أَبْلَاه.
অর্থ : কেয়ামতের দিন কোন বান্দার পা যুগল সামনে অগ্রসর হতে পারবে না, যাবত না তাকে তার জীবন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে, কিভাবে তা অতিবাহিত করেছে। তার ইলম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে, কী পরিমাণ সে অনুযায়ী আমল করেছে। তাকে তার সম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে, কোথা থেকে তা উপার্জন করেছে আর কোথায় ব্যয় করেছে। তাকে তার দেহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে, কিভাবে তা ক্ষয় হয়েছে। -সুনানে তিরমিযী, হাদীস ২৪১৭ (হাদীসটি সহীহ লি গায়রিহী। ইমাম তিরমিযী বলেছেন, হাসান সহীহ)
লক্ষ করুন, কেয়ামতের মাঠে কঠিন পাঁচটি প্রশ্নের দুটিই হবে সম্পদ উপার্জন ও ব্যয় সম্পর্কে। অন্য দৃষ্টিতে দেখলে, কেয়ামতের সেই কঠিন মুহূর্তে যে প্রশ্নগুলোর জবাব বান্দাকে অবশ্যই দিতে হবে, যার উত্তর দেয়া ছাড়া এক কদমও সামনে বাড়ার ক্ষমতা থাকবে না, তার ৪০% হবে সম্পদের উপার্জন ও ব্যয় সম্পর্কে। হালাল ও হারাম সম্পর্কে। এই বিষয়গুলো কি আমাদেরকে ভাবায় না!
তাই ব্যবসায় হালাল-হারাম নিশ্চিত করার গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষত রমযান মাসে, নেকীর মাসে, পবিত্রতার মাসে এর গুরুত্ব হাজারগুণে বেড়ে যায়। তাই ব্যবসায়ীদের প্রথম কর্তব্য হলো, হালাল ব্যবসা নিশ্চিত করা।
ব্যবসায় হালাল নিশ্চিত করতে হবে দুই দিক থেকে।
১. পণ্য হালাল হওয়া। হারাম পণ্য, নাজায়েজ পণ্যের ব্যবসা করা যাবে না। চুরির মাল বেচাকেনা করা যাবে না। না জায়েজ পোষাকের ব্যবসা করা যাবে না। না জায়েজ কাজে ব্যবহৃত হয় এমন পণ্যের ব্যবসা করা যাবে না।
২. পদ্ধতি হালাল হওয়া। সকল ধরনে হারাম উপাদান থেকে বিরত থাকা। সুদ, ঘুষ, জুয়া, কিমার, জাহালাহ, গারার, ধোঁকা ও প্রতারণা, অন্যায় সিন্ডিকেট থেকে মুক্ত থাকা।
সব ধরনের ধোঁকা ও প্রতারণা থেকে বেঁচে থাকা
ব্যবসায় সব ধরনের ধোঁকা ও প্রতারণা থেকে বেঁচে থাকতে হবে। চাই সেটা যত ছোট হোক বা বড় হোক। ব্যবসায় মিথ্যা বলা, মাপে কম দেয়া, মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য দিয়ে দেয়া, পণ্য সম্পর্কে ভুল তথ্য দেয়া, পণ্যের এমন গুণাগুণ বর্ণনা করা যা তার মাঝে নেই ইত্যাদি ব্যবসায় প্রতারণার অংশ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন,
وَيْلٌ لِّلْمُطَفِّفِينَ (1) الَّذِينَ إِذَا اكْتَالُوا عَلَى النَّاسِ يَسْتَوْفُونَ (2) وَإِذَا كَالُوهُمْ أَو وَّزَنُوهُمْ يُخْسِرُونَ (3) أَلَا يَظُنُّ أُولَٰئِكَ أَنَّهُم مَّبْعُوثُونَ (4) لِيَوْمٍ عَظِيمٍ (5) يَوْمَ يَقُومُ النَّاسُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ (6)
অর্থ : দুর্ভোগ তাদের জন্য যারা মাপে কম দেয়, যারা লোকদের থেকে মেপে নেওয়ার সময় পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে, আর যখন তাদের জন্য পরিমাপ করে তখন কমিয়ে দেয়। তারা কি চিন্তা করে না যে, তারা পুনরুত্থিত হবে? এক মহাদিবসে, যেদিন সমস্ত মানুষ রব্বুল আলামীনের সামনে দাঁড়াবে। -সূরা মুতাফফিফীন (৮৩) : ১-৬
শুধু ওজনে কম দেয়াই ‘মাপে কম দেয়া’ নয়। পণ্যের কোয়ালিটি খারাপ দেয়া, মানে খারাপ দেয়াও মাপে কম দেয়া। লোকাল পণ্য ব্র্যান্ডের নামে চালিয়ে দেয়াও মাপে কম দেয়া। ঈদের বাজারে এই গুনাহটির ব্যাপক চর্চা হয়। মিথ্যা যেনো ব্যবসায়ীদের অভ্যাসে পরিণত হয়। মানুষকে মিথ্যা বলে, কথার মারপ্যাঁচে ফেলে, আলোর ঝলক দেখিয়ে প্রতারিত করা হয়।
এই ধোঁকা ও প্রতারণা, মিথ্যা এবং মিথ্যা শপথ ব্যবসার জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ব্যবসার বরকতকে নষ্ট করে দেয়। নবীজী বলেন,
إِيَّاكُمْ وَكَثْرَةَ الْحَلِفِ فِي الْبَيْعِ، فَإِنَّهُ يُنْفِقُ، ثُمَّ يَمْحَقُ۔
অর্থ : তোমরা বেচাকেনায় অত্যাধিক কসম করা থেকে বেঁচে থাক, কেননা তা পণ্যকে বাজারে অচল করে দেয়, আর ব্যবসার বরকতকে নষ্ট করে দেয়। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৬০৭
সব ধরনের সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দেয়া
আমাদের দেশে রমযানকে কেন্দ্র করে অসাধু ব্যবসায়িদের বড় বড় সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে। সবজি বাজার, ফলের বাজার থেকে নিয়ে নিত্য পণ্যের বাজারও এই সিন্ডিকেটের হাতে কোণঠাসা হয়ে পড়ে। ক্ষতির শিকার হয় ক্রেতা সাধারণ। মাসব্যাপী নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে অনেকেই হাঁপিয়ে ওঠে। স্বাস্থসম্মত দুবেলা সাহরী ইফতারের ব্যবস্থা করাও কঠিন হয়ে পড়ে অনেক পরিবারের।
এটি সুস্পষ্ট জুলুম। মারাত্মক অন্যায়। রোযাদারের মুখের গ্রাস নিয়ে অন্যায় মুনাফা কামানো। হাশরের ময়দানে এর জন্য কঠিন জবাবদিহিতার শিকার হতে হবে। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, لَا يَحْتَكِرُ إِلَّا خَاطِئٌ۔ অর্থ : পাপীরাই কেবল ইহতিকার করে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১২০৬
ব্যবসায়ী ভাইদের উচিত এধরনের সিন্ডিকেটকারীদের প্রতিহত করা। রমযানে এবং রমযানের বাইরে। অন্যায় সিন্ডিকেট সব সময়ই না জায়েজ। তাই সিন্ডিকেটগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে ভেঙ্গে দিতে হবে।
আর সিন্ডিকেটকারীদেরও উচিত আল্লাহকে ভয় করা। রাতারাতি সম্পদশালী হওয়ার নেশা থেকে বের হয়ে আসা। এই সম্পদ আত্মসাতের সম্পদ, এই সম্পদ অন্যায় ও জুলুমের সম্পদ, এই সম্পদ রোযাদারের মুখের গ্রাস কেড়ে নেয়া সম্পদ। এধরনের হারাম সম্পদ উপার্জন থেকে বের হয়ে হালাল উপার্জন ও নৈতিক ব্যবসায় আত্মনিয়োগের সময় এখনই। রমযান মাসই তার উত্তম মৌসুম।
উদার ও মহানুভব হওয়া
ব্যবসায়ীদের উদার ও মহানুভব হওয়া চাই। বিশেষত রমযান মাসে। রোযাদারদের প্রতি উদারতা প্রদর্শন করা, তাদের জন্য ভালো পণ্য সুলভ মূল্যে প্রদান করা ব্যবসায় মহানুভবতার পরিচয়। নেককার, আস্থাভাজন, ভালো মানুষদের হাতে টাকা না থাকলে বাকিতে পণ্য দেয়া। রোযাদারদের জন্য যথাসম্ভব পণ্যের মূল্য কমিয়ে রাখা, কম মুনাফা করা। এভাবে রমযানে রোযাদারদের প্রতি উদারতা প্রদর্শনের মাধ্যমে ব্যবসাকে ইবাদাতে রূপান্তর করা সম্ভব। যা রমযানে দৃশ্যত কম ইবাদাত করা হলেও দিনশেষে নেকীর ভাণ্ডারকে অনেক বেশি সমৃদ্ধ করবে।
হাদীসে এসেছে, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে ইফতার করাবে, সে তার সমান সওয়াব লাভ করবে।” -সুনানে তিরমিজি, হাদীস ৮০৭। (সনদ সহীহ। ইমাম তিরমিজি বলেছেন, হাদীসটি হাসান সহীহ)
মাহে রমযানে ইফতার সামগ্রি বিক্রিতে ১০ টাকা কম রেখে আমরা কিন্তু রোযাদারদেরকে ১০ টাকা পরিমাণ ইফতার করাতে পারি।
উদারতা ও মহানুভবতা ব্যবসায় বারাকাহ ও রহমত আনে। হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রা. বর্ণিত, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
رَحِمَ اللَّهُ رَجُلًا سَمْحًا، إِذَا بَاعَ، وَإِذَا اشْتَرَى، وَإِذَا اقْتَضَى۔
অর্থ : আল্লাহ এমন ব্যক্তির প্রতি রহম করুন, যে ক্রয়-বিক্রয়ের সময় এবং ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির কাছে ঋণ চাওয়ার সময় উদারতা প্রদর্শন করে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ২০৭৬
আমরা কি আমাদের ব্যবসায় আল্লাহর দয়া ও রহমতের প্রত্যাশী না?
হৃদয়ে তাকওয়া এবং আল্লাহভীতি থাকা
ব্যবসায় যত ধরনের অসঙ্গতি আর অনৈতিকতার আলোচনা হয়েছে তার মূল কারণ হলো হৃদয়ে তাকওয়া এবং আল্লাহভীতি না থাকা। তাকওয়া মুমিনের প্রধান চালিকাশক্তি। হৃদয়ে তাকওয়া থাকলে কাউকে ধোঁকা দেয়া সম্ভব না, মাপে কম দেয়া সম্ভব না, অন্যায় সিন্ডিকেট গড়ে তোলা সম্ভব না। তাই ব্যবসায়ীদের উচিত সর্বদা আল্লাহর ভয় অন্তরে জাগ্রত রাখা।
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই বিষয়টির প্রতি খুব গুরুত্ব দিয়েছেন। হযরত রিফাআ ইবনে রাফে রা. থেকে বর্ণিত, একদা তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মসজিদে যাচ্ছিলেন। নবীজী দেখলেন লোকেরা বেচাকেনা করছে। নবীজী সবাইকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে ডাকলেন, يَا مَعْشَرَ التُّجَّارِ۔ “হে ব্যবসায়ীরা!” সবাই নবীজীর ডাকে সাড়া দিল। নবীজী বললেন, إِنَّ التُّجَّارَ يُبْعَثُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فُجَّارًا، إِلَّا مَنِ اتَّقَى، وَبَرَّ، وَصَدَقَ۔ “নিশ্চয় কেয়ামতের দিন ব্যবসায়ীদেরকে অপরাধী হিসাবে উঠানো হবে, তবে যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে, নৈতিকতা ও সততা অবলম্বন করেছে তারা ব্যতীত।” -সুনানে তিরমিযি : ১২১০। (হাসান লি গায়রিহী। ইমাম তিরমিয বলেছেন, হাদীসটি হাসান সহীহ)
অতএব, রমযানে ব্যবসার ক্ষেত্রে হৃদয়ে তাকওয়া এবং আল্লাহভীতি ধারণ করি। যা একদিকে আমাদের ব্যবসায় নৈতিকতা রক্ষা করতে সহযোগিতা করবে, অপরদিকে ব্যবসার কারণে আল্লাহকে ভুলে যাওয়া, আল্লাহর হক নামাজ, রোজা ও অন্যান্য ইবাদতে অবহেলা এবং গাফিলতি থেকে বাচাবে।
বেশি বেশি দান সদকা করা
রমযানে ব্যবসায়িদের সর্বশেষ করণীয় হলো, বেশি বেশি দান সদকাহ করা। সদকা ব্যবসায়ে বরকত আনে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যবসায়ীদেরকে বেচাকেনার সাথে সাথে সদকার অসিয়ত করেছেন। কায়েস ইবনে আবি গারাযা রা. থেকে বর্ণিত, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে আসলেন। আমরা বেচাকেনায় রত ছিলাম। নবীজী বললেন, يَا مَعْشَرَ التُّجَّارِ، إِنَّ الشَّيْطَانَ وَالْإِثْمَ يَحْضُرَانِ الْبَيْعَ، فَشُوبُوا بَيْعَكُمْ بِالصَّدَقَةِ۔ “হে ব্যবসায়ীরা! নিশ্চয় ব্যবসায় শয়তান ও নানান পাপের উপস্থিতি থাকে, অতএব তোমরা তোমাদের বেচাকেনার সাথে সাথে সদকা করো।” -সুনানে তিরমিযী, হাদীস ১২০৮ (সনদ সহীহ। ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন)
রমযানে ব্যবসা-বাণিজ্যে এই সদকাহর পরিমাণ অন্য সময়ের চেয়ে বেশি হওয়া উচিত। কেননা, এ মাসে ব্যবসায় ত্রুটি হলে তার গুনাহও বেশি। তাই ব্যবসার অনিচ্ছা ত্রুটিগুলো কাটিয়ে ব্যবসাকে রমযানের নেকী উপার্জনের মাধ্যম বানাতে সদকাহর বিকল্প নেই।
তাই আসুন, আমরা রমযানকে ব্যবসার মৌসুম না বানিয়ে ইবাদতের মৌসুম বানাই। আসুন, রমযানে প্রচলিত ব্যবসার রূপটাকে পাল্টে দেই। অন্যায় সিন্ডিকেটগুলো ভেঙ্গে দেই। ব্যবসাকে বানাই সৃষ্টির সেবা আর সৃষ্টিকর্তার আনুগত্য ও ইবাদতের মাধ্যম। তবেই আমরা সফল ব্যবসায়ী হবো, দুনিয়া এবং আখেরাতে।
লিখেছেন : মুহাম্মদ সানাউল্লাহ
তারিখ : ১৭/০২/২০২৫ ইং