Copy of White Brown Modern Home Made Crispy Fish Fry Facebook Post (Website)

বর্তমান সমাজের অস্থিরতা, অপরাধপ্রবণতা এবং নিরাপত্তাহীনতা: সমাধান কোথায়?

আজকের সমাজে অস্থিরতা, অপরাধপ্রবণতা এবং নিরাপত্তাহীনতা যেন এক ভয়াবহ মহামারীর রূপ ধারণ করেছে। রাস্তা, ঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এমনকি উপাসনালয়—কোনো স্থানই আর পুরোপুরি নিরাপদ নয়। শিশু থেকে বৃদ্ধ—সবার চোখে-মুখে এক ধরনের উদ্বেগ, আতঙ্ক ও অস্থিরতার ছায়া। অথচ, সভ্যতা যতই উন্নত হয়েছে, মানুষের ভোগ্যপণ্যের পরিমাণ যতই বেড়েছে, মানবিক শান্তি ও নিরাপত্তা ততই দূরে সরে গেছে।

এই চিত্র শুধু কোনো একটি দেশের নয়, বরং পুরো পৃথিবী জুড়েই আজ অস্থিরতার বিষাক্ত ছোবল। প্রশ্ন হচ্ছে—এত উন্নয়ন, এত শিক্ষা, এত প্রযুক্তি থাকার পরও সমাজে কেন এত অন্যায়, সহিংসতা, দুর্নীতি, আত্মহত্যা, এবং নিরাপত্তাহীনতা? কোথায় এই সমস্যার শেকড়? এবং কী হতে পারে এর টেকসই সমাধান?

# বর্তমান ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা
সমাজের ভেতরে এক গভীর বৈষম্য গড়ে উঠেছে। কিছু মানুষের হাতে জমেছে বিপুল সম্পদ, আর এক বিশাল জনগোষ্ঠী দিন কাটায় অনাহারে-অর্ধাহারে। অক্সফাম-এর ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ এর রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ১% মানুষের সম্পদের পরিমাণ বাকি ৯৫% মানুষের সম্মিলিত সম্পদের চেয়েও বেশি। এবং পৃথিবীর মোট সম্পদের প্রায় ৭৬ শতাংশ কুক্ষিগত হয়ে আছে মাত্র ১ শতাংশ মানুষের হাতে (https://surli.cc/clproc)। অপরদিকে, শতকরা ৫০ ভাগ দরিদ্র মানুষ ভাগ করে নেয় মাত্র ২ শতাংশ সম্পদ! এই ভয়ংকর বৈষম্যই তৈরি করেছে হিংসা, লোভ, অপরাধ, প্রতারণা, ও ছিনতাইয়ের মতো সামাজিক ব্যাধি।

# সমাধানের পথে ইসলামী অর্থনীতি
ইসলামী অর্থনীতি কেবল একটি বিকল্প অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নয়; এটি মূলত এক নৈতিক, ইনসাফভিত্তিক এবং ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ গঠনের রূপরেখা। এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো—মানব জীবনের মৌলিক প্রয়োজন নিশ্চিত করা, সম্পদের ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করা এবং ধনসম্পদের পুঞ্জীভবন রোধ করা। ইসলামী অর্থনীতির কয়েকটি মূলনীতি এই সংকট থেকে মুক্তির দিশা দেখায়:

## ১. সম্পদের মূল মালিকানা একমাত্র আল্লাহর
ইসলামী অর্থনীতির ভিত্তি হলো, আল্লাহই সবকিছুর মালিক এবং মানুষ তাঁর প্রতিনিধি (খলিফা)। ফলে অর্থনৈতিক আচরণ শুধু ব্যক্তিগত লাভ নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং মানবকল্যাণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত হওয়া চাই। এই দৃষ্টিভঙ্গি ব্যক্তি থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্তেও নৈতিকতার বোধ তৈরি করে।

## ২. আমানত ও জবাবদিহিতা
সম্পদ ব্যবহারে মানুষ দায়িত্বশীল—এই বিশ্বাস তাকে আত্মকেন্দ্রিকতা থেকে মুক্ত করে। অপরের হক গলাধঃকরণ, দুর্নীতি, চুরি ইত্যাদি অনৈতিক কাজ রোধে ইসলামী অর্থনীতির এই নৈতিক দিক অত্যন্ত কার্যকর।

## ৩. ইনসাফভিত্তিক বণ্টন
ইসলামে ধনসম্পদ কেবল গুটিকয়েক ধনীর মধ্যে আবর্তন করার অনুমতি নেই। সূষম (ন্যায়সঙ্গত) বণ্টনের বিষয়ে কুরআনে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
كَيْ لَا يَكُونَ دُولَةًۢ بَيْنَ ٱلْأَغْنِيَآءِ مِنكُمْ ۚ
“যাতে তা (সম্পদ) কেবলমাত্র তোমাদের ধনীদের মধ্যেই আবর্তিত না হয়।” 📖 সূরা আল-হাশর (59:7)
জাকাত, সাদাকাহ, ওয়াকফ, ওয়াসিয়্যাত, ওয়ারিস এবং নিষিদ্ধ রিবা (সুদ)-এর মতো প্রাকটিক্যাল ব্যবস্থার মাধ্যমে ইসলাম ধনী-গরিবের বৈষম্য রেখাকে কমিয়ে দিয়েছে।

## ৪. ইজতেহাদে জিমাঈ (Collective Ijtihad)
আধুনিক অর্থনৈতিক সংকটের মোকাবেলায় ইসলামী অর্থনীতি কেবল কুরআন-হাদীসের নির্দিষ্ট হুকুম নয়, বরং ইজতেহাদের মাধ্যমে যুগোপযোগী সমাধানও প্রদান করে। একক নয়, বরং সমষ্টিগত ইজতেহাদ (Ijma’i Ijtihad) বর্তমানের জটিল অর্থনৈতিক বাস্তবতায় সমাধান বের করার গুরুত্বপূর্ণ পন্থা।

## শেষ কথা
যতদিন না পর্যন্ত সমাজে ন্যায়ভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কায়েম হয়, যতদিন না সমাজের প্রতিটি মানুষকে সম্মানজনক জীবনের নিশ্চয়তা দেওয়া যায়, ততদিন সমাজের অস্থিরতা ও অপরাধের গ্যাঁড়াকল থেকে মুক্তি সম্ভব নয়।

ইসলামী অর্থনীতি কোনো কল্পনার কথা নয়—এটি পরীক্ষিত, প্রমাণিত এবং নৈতিকতাভিত্তিক এক পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি—সব পর্যায়ে যদি এই নীতিমালাগুলো বাস্তবায়ন হয়, তবে সমাজে ফিরে আসবে ভারসাম্য, শান্তি ও নিরাপত্তা।

✍️ লেখক: মুফতী আহসানুল ইসলাম
শিক্ষক: ইসলামী অর্থনীতি
মারকাযু দিরাসাতিল ইকতিসাদিল ইসলাম

Share:

Facebook
Twitter
Pinterest
LinkedIn
Scroll to Top