সফরের প্রেক্ষাপট
আমার এবারের পাকিস্তান সফর ছিল স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের গ্লোবাল শারীয়াহ মজলিস ২০২৪ এ অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে। যা ২৩ শে অক্টোবর ২০২৪ এ অনুষ্ঠিত হয়। গত তিন বছর যাবত এটি প্রতি বছর হয়ে আসছে। এ বছরের মজলিসটি পাকিস্তানের করাচীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই প্রোগ্রামকে কেন্দ্র করে পাকিস্তান যাওয়া হলেও এবারের সফরটি আরো বেশ কিছু সুন্দর অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ছিল। এরমাঝে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো শাইখুল ইসলাম মুফতী তাকী উসমানী হাফিজাহুল্লাহর সাথে একান্ত সাক্ষাত। এছাড়া দারুল উলূম করাচি, বানুরী টাউন মাদরাসা, মিযান ব্যাংক ইত্যাদি ভিজিটও আমার অভিজ্ঞতাকে বেশ সমৃদ্ধ করে। সেই অভিজ্ঞতার কিছু স্মৃতি এই লেখায় চিত্রিত করছি।
বানুরী টাউন মাদরাসায়
একুশ তারিখ সকাল দশটায় আমরা পাকিস্তান পৌঁছি। ইস্তাম্বুলে ফ্লাইট ডিলে হওয়ায় পৌঁছতে কিছুটা বিলম্ব হয়। সফরসঙ্গী ছিলেন মুফতি আব্দুল্লাহ মাসুম হাফি.। সেদিন মাগরিবের পর আমরা জামিয়া বানুরী টাউন মাদরাসা ভিজিটে যাই। আমাদের সঙ্গে ছিলেন বাহরাইনের শায়খ নিযাম ইয়াকূবী হাফি.। প্রথমে আমাদেরকে দাওরায়ে হাদীসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শায়খ নিযাম ইয়াকূবী ছাত্রদেরকে কিছু নাসীহা করেন। বিশেষত এ অঞ্চলে হিন্দের উলামায়ে কেরামের যে অবদান তা তুলে ধরেন।
এরপর আমরা জামিয়ার তাখাসসুস বিভাগে যাই। জামিয়ার ফতোয়া বিভাগ দেখে আমরা খুব বেশি অভিভূত হই। এখানে স্টুডেন্ট পোর্টালের মতো সিস্টেম আছে। প্রক্রিয়াটা হলো, যখন কোন মুস্তাফতী ফতোয়া জিজ্ঞেস করে, তখন সেটা সিস্টেমেটিক ড্যাশবোর্ডে চলে আসে। এরপর সেটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে অথবা কোনও উস্তাদের মাধ্যমে ইফতা বিভাগের একজন ছাত্রের কাছে অ্যাসাইন করা হয়। সেই ছাত্র তামরীন করেন এবং হাওয়ালা ইত্যাদি জমা করেন। এরপর সেটা পরবর্তী ধাপে চলে যায়। তাকে মুসাহহি বলে। মুসাহহির কাজ হলো এতে কোনও ত্রুটি থাকলে বা সংশোধনের প্রয়োজন হলে তিনি তা করেন। মুসাহহি এপ্রুভ করার পর ফাইনাল এপ্রুভ যার কাছে, তাকে মুসাদ্দিক বলা হয়। তিনি এপ্রুভ করে সিল দিবেন। এই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে ফতোয়াটি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
ফতোয়া বিভাগের ছাত্রদের প্রত্যেকের টেবিলেই ল্যাপটপ আছে। তারা মাকাতাবায়ে শামেলা এবং অন্যান্য ই-মাকতাবা ব্যবহার করে।
দারুল উলূম করাচিতে
২য় দিন আমরা দারুল উলূম করাচী ভিজিট করি। দারুল উলূম করাচির বিশাল অত্যাধুনিক সমৃদ্ধ লাইব্রেরী আমাদেরকে মুগ্ধ করে। আমার যতটুকু মনে পড়ছে লাইব্রেরীটি প্রায় চার তলা। ভিতরে ঢুকতেই হাতের ডান পাশে বাম পাশে সেলফ। সেলফের আড়ালে প্রশস্ত জায়গা। যেখানে ফ্লোরে বসে পড়ার জন্য দীর্ঘ টেবিল দেওয়া। অনেকে মিলে চারপাশ ঘিরে পড়তে পারে।
ঢুকার একটু পরেই হাতের ডানে বড় ডিসপ্লেতে কিছু কিতাব রাখা। যেমন আশরাফ আলী থানভী রহ. এবং অন্যান্য আকাবিরদের কিতাব। যেগুলো হস্তলিপি আকারে এখানে মিউজিয়ামের মতো করে সংরক্ষণ করা হয়, এবং সাথে রাখা আছে তার বর্তমান এডিশন। একইভাবে মুফতী শফী উসমানী রহ. এর ম্যানুস্ক্রিপ্টও এখানে আছে। আরেকটু সামনে গিয়ে দুপাশে সামনে গ্লাস করা কিছু সেলফ দেখি। যেখানে মুফতী তাকী উসমানী, রাফী উসমানী, শফী উসমানী রহ. সহ দারুল উলূম করাচির উস্তাদদের নানা পাবলিকেশন সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
এরপর লাইব্রেরীর দোতলায় যাই। সেখানে কম্পিউটারে কিতাব খুঁজে পাওয়ার ব্যবস্থা আছে। কোন শেলফে কোন কিতাব আছে তা কম্পিউটার থেকে বের করা যায়। যেটা সাধারণত আধুনিক লাইব্রেরীর বৈশিষ্ট্য। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এমন আছে।
এরপর আমরা দারুল ইফতায় যাই। আমাদের দেশে দারুল ইফতা সাধারণত একটা বা দুইটা কক্ষবিশিষ্ট, যেখানে একই সঙ্গে ফতোয়া বিভাগও পরিচালিত হয়। কিন্তু জামিয়া বানুরী টাউন এবং দারুল উলূম করাচীতে দেখলাম দারুল ইফতা এবং ফতোয়া বিভাগ সম্পূর্ণ আলাদা। ফতোয়া বিভাগ এমনভাবে প্রস্তুত করা, যেখানে মুস্তাফতী এসে সরাসরি প্রশ্ন করতে পারবেন।
অনেকটা হসপিটালের মতো। যেখানে অনেকগুলো চেম্বার আছে, চেম্বারে ডাক্তারবৃন্দ আছেন। দারুল উলূম করাচির ফতোয়া বিভাগেও এমন অনেকগুলো চেম্বার আছে। প্রতি চেম্বারে টেবিলে একজন করে মুফতী সাহেব বসেন। কম্পিউটার ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি আছে। আবার টেবিলের সামনে দুটো চেয়ার রাখা। যাতে মুস্তাফতী এক বা একাধিক হলে বসতে পারেন। পুরো একটা কর্পোরেট অফিসের মতো। এক পাশে রিসিপশন আছে, রিসিপশনের সামনে বসার মতো জায়গা আছে। মুস্তাফতী এখান থেকে সিরিয়াল নিয়ে অপেক্ষা করবেন। সিরিয়াল আসলে মুফতীর চেম্বারে ঢুকবেন এবং তার প্রশ্ন নিয়ে মুফতী সাহেবের সঙ্গে আলোচনা করবেন। নিচতলা পুরোটাই এমন।
চতুর্থ তলায় তাখাসসুস ফিল ফিকহের মূল ক্লাসরুম। বিরাট রুম। প্রত্যেক ছাত্রের জন্য ডেস্ক আছে। প্রত্যেকটা ডেস্কের আলাদা কম্পিউটার, টেবিল চেয়ার ইত্যাদি। তারা এখানে অধ্যায়ন ও রিসার্চ করছেন। এটা হলো এক পাশে। অন্য পাশে অডিটোরিয়াম, যেখানে কোনও ছোটখাটো সেমিনার, ট্রেইনিং বা এক দুইশো মানুষের কনফারেন্স ইত্যাদি করা যায়।
ইফতা বিভাগের সিলেবাস দেখলাম, সেখানে দরসের চেয়ে বেশি তামরীন (ফতোয়া অনুশীলন) রাখা। এখানেও বানুরী টাউনের মতোই ফতোয়া বিভাগে আসা প্রশ্নগুলোই ছাত্ররা অনুশীলন করে।
বানুরী টাউনের মতোই প্রশ্নগুলো যখন মানুষ করে তখন এটা তাদের সিস্টেমে এন্ট্রি হয়ে যায়, যেমন টিকেট সিস্টেম সফটওয়্যারে কেউ ইনকুয়ারি করলে অটোমেটিক টিকিট তৈরি হয়, এখানেও তাই। এরপর সেই কুয়ারিটা বা সেই প্রশ্নটা কয়েক স্তরে ফাইনালাইজ হয় :
প্রথমত এটা একজন ছাত্রর কাছে অ্যাসাইন করা হয়। সম্ভবত অ্যাসাইন করেন মুশরিফ বা উস্তাদ যিনি থাকেন তিনি। অ্যাসাইন করার পরে ছাত্র ফতোয়াটির উপর কাজ করেন।
এরপর সেটা চলে যায় দ্বিতীয় স্তরে, মুসাহহি এর কাছে। তিনি ফার্স্ট লেভেলে উত্তরটিকে সংশোধন করে দেন, কোনও দিক নির্দেশনা থাকলে দেন।
এরপর থার্ড লেভেলে হচ্ছে মুসাদ্দিক। মুসাদ্দিক মূলত বড় একজন মুফতী সাহেব হয়ে থাকেন। যেমন দারুল উলূম করাচীতে মুফতী তাকী উসমানী, মুফতী আব্দুল মান্নান বাংলাদেশী হাফি., এরকম আরো অনেকে আছেন।
উনারা যখন এটা সিলমোহরের মাধ্যমে তাসদীক করেন, তখন এটা সেই পাবলিক পোর্টালে চলে যায় এবং যিনি প্রশ্ন করেছেন তার কাছে নোটিফিকেশন যায়। অর্থ্যাৎ পুরো প্রক্রিয়াটা একটা সিস্টেমিক পদ্ধতিতে হয়। এখানে ম্যানুয়াল কোনও কাজ নাই। প্রিন্ট করার কোনও বিষয় নেই।
মিযান ব্যাংক ভিজিট
মিজান ব্যাংক পাকিস্তানের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ইসলামী বাণিজ্যিক ব্যাংক। এটির ৮৪৫ টিরও বেশি শাখা রয়েছে। পাকিস্তানের ইসলামী ব্যাংকিং খাতে ব্যাংকটির মার্কেট শেয়ার ৩৫ %। ব্যাংকটি ১৯৯৭ সালে আল-মিজান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক হিসাবে শুরু হয়েছিলো। তারপর ২০০২ সালে পাকিস্তানে পূর্ণাঙ্গভাবে সাধারণ কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে। ইসলামী ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এর ৯% এর বেশি শেয়ারের মালিক। মুফতী তাকী উসমানী হাফি. এর শারীয়াহ বোর্ডের প্রধান। এটি একাধিক বার “বেস্ট ব্যাংক অফ পাকিস্তান” এওয়ার্ড পেয়েছে।
৩য় দিন আমরা মিযান ব্যাংক ভিজিটে যাই। সেখানে আমরা তাদের রেসিডেন্সিয়াল শারীয়াহ বোর্ড মেম্বার মুফতী নাবীদ সহ অন্যদের সঙ্গে বসি। কীভাবে তারা মুরাবাহা করেন, কীভাবে কবয বা পজেশন হয়, ইত্যাদী অনেকগুলো বিষয় নিয়ে আলোচনা করি। আলোচনা থেকে যা বুঝে আসল তা হলো, আমাদের দেশে ইসলামী ব্যাংকগুলো যেভাবে চলে, তার সাথে মিযান ব্যাংকের কার্যক্রমের খুব বেশি পার্থক্য নেই। সেখানেও গ্রাহকের একাউন্টে টাকা পাঠানো, গ্রাহককে এজেন্ট বানানো ইত্যাদি ঘটে। তবে সেখানে কিছু উন্নত সিস্টেম আছে, যার ফলে শারীয়াহ লঙ্ঘন হওয়ার আশংকা কম।
আসরের পর আমরা শারীয়াহ অডিট যারা দেখছেন ফারহান উসমানী, আহমাদ সিদ্দীক ও অন্যান্যদের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলি। এরপর পুরো ব্যাংকটা ঘুরে দেখি। বিরাট ব্যাংক। চমৎকার ডেকোরেশন। কিছু মহিলাও দেখলাম কাজ করছেন সম্পূর্ণ বোরকা নিকাব পরে। কালো বোরকা নিকাব, মাশাআল্লাহ।
ফেরার পথে তারা আমাদেরকে কিছু হাদিয়া দেন। হাদিয়ার মাঝে ছিলো আসান তরজমায়ে কুরআন, মুফতী তাকী উসমানী হাফি. এর যে সংক্ষিপ্ত তাফসীর সেটা, তাদের সর্বশেষ ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট এবং একটি চমৎকার বুকমার্ক। আমরা বিদায় নিয়ে হোটেলে ফিরে আসি।
তাকী উসমানী হাফি. এর সাথে একান্ত সাক্ষাত
৪র্থ দিন আমরা আবারও দারুল উলূম করাচীতে যাই শাইখুল ইসলাম হাফি. এর সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে। ইফতা বিভাগের সামনে থেকে মুফতী মুআয আশরাফ উসমানী আমাদেরকে গাড়িতে করে শাইখুল ইসলাম হাফি. এর রুমের সামনে নিয়ে যান। কিন্তু দূর থেকে দেখা যায় যে শাইখুল ইসলাম এখনো ঘর থেকে বের হননি। ঘরের সামনে গাড়ি অপেক্ষমান। শাইখুল ইসলামের ঘর এবং অফিস কাছাকাছি। কিন্তু হাটতে অসুবিধা হয় দেখে তিনি গাড়িতে করে আসেন। যেহেতু শায়খ এখনো আসেননি তাই মুআয আমাদেরকে আরেকটু ঘুরে দেখান।
আমাদেরকে মসজিদে নিয়ে যান। বিরাট মসজিদ। অত্যন্ত সুন্দর মাশাআল্লাহ। খুব বেশিদিন হয়নি এটা নির্মাণ হয়েছে, হয়ত পাঁচ সাত বছর হবে। সামনে যে উঠানটা সেটাও অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন। এবং এটার বেজমেন্টেও একই রকম জায়গা আছে বলে জানিয়েছেন। যদিও আমরা বেজমেন্টে যাইনি। এখানে প্রায় বিশ বাইশ হাজার মানুষের মতো একসঙ্গে নামায পড়তে পারেন। এরপর ছাত্রাবাসটা আবার ঘুরে দেখি। দারুল হাদীসে ক্লাস হচ্ছিলো তখন। আমরা বাহির থেকে দারুল হাদীসের ভেতরটা দেখার চেষ্টা করি। রুমটা অনেকটা পার্লামেন্টের মতো। অর্থাৎ শায়খ যেখানে বসে আছেন, ওটা একদম নিচের দিকে। আর আস্তে আস্তে ছাত্রদের সিটগুলো উপরের দিকে যাচ্ছে। এতে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত বা নিচ থেকে উপর পর্যন্ত একসাথে সব দেখা যায়। প্রত্যেক ছাত্রের সামনে একটা করে মাইক্রোফোন আছে। আমরা এ ধরণের সিটিংগুলো দেখি বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে। যেমন মালয়েশিয়া ইনসিয়েফ ইউনিভার্সিটি এবং বাহরাইন ইন্সটিটিউশন অব ফাইন্যান্সিয়ালে এ ধরণের অডিটোরিয়াম দেখেছি।
আমরা আরো দু একটি ক্লাস বাহির থেকে দেখার চেষ্টা করেছি। ইতোমধ্যে শাইখুল ইসলাম হাফি. চলে আসেন। শায়খ আসেন, গাড়ি থেকে নামেন। বিভিন্ন মানুষজন দেখা করতে এসেছেন। দুজন ছিলেন, দেখে মনে হয়েছে পাঠান, উনাদের চক্ষু অশ্রুসজল। শায়খকে সরাসরি দেখতে পেয়েছেন, এটা তাদের জন্য অত্যন্ত আবেগঘন বিষয় ছিলো। শায়খের সাথে মুসাফাহা করছেন, হাতে চুম্বন করছেন। এরপর আমরাও দেখা করেছি, মুসাফাহা করেছি।
শায়খ ভিতরে গেলেন। কিছুক্ষণ পর আমাদের ডাক আসে। আমরা রুমের ভিতরে যাই। দুইটা রুম ছিলো, মাঝে একটি রুম, এরপর একদম ভেতরে শাইখুল ইসলাম হাফি.। রুমের এক পাশে সোফা সেট রাখা, আরেক পাশে শায়খের বিরাট টেবিল। এই টেবিলের উপর একটা ছোট মিনি টেবিলের মতো, মিনি টেবিল অনেকটা আমাদের ল্যাপটপ স্ট্যান্ডের মতো। কিন্তু এটা কাঠের এবং অনেক সুন্দর। এটার উপর একটা টেবিল ল্যাম্প। শায়খ এখানে ফতোয়া ইত্যাদি দেখেন। মুফতী মুআয জানিয়েছেন, ভেতরে আরেকটা রুম আছে যেখানে মূলত শায়খ নিজস্ব লেখালেখির কাজ করেন। সেখানে কারে যাওয়ার অনুমতি নেই।
মুফতী মুআয সাহেব সংক্ষেপে আমাদের পরিচয় দিলেন। আমরাও আমাদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিলাম। আইএফএ কনসাল্টেন্সির কথা বললাম। আদল এডভাইজরি এবং মারকাযু দিরাসাতিল ইকতিসাদিল ইসলামীর কথাও বললাম। শায়খ শুনে অনেক দোয়া দিলেন।
আমরা যে পেপারটি আমেরিকাতে প্রেজেন্ট করেছি সেটি, ও মুফতী আব্দুল্লাহ মাসুম হাফি. এর হেদায়ার উপর লিখিত একটি বই শায়খের কাছে দেই। শায়খ একটি দোয়া লিখে নিজের সাইন দিয়ে দেন। মুফতী আব্দুল্লাহ মাসুম আরেকটি মুলাহাযা জমা দিয়েছেন শায়খের কাছে। উসূলে ইফতার উপর করা। শায়খ সেটা সানন্দে গ্রহণ করেছেন।
শায়খের কাছে বিনীতভাবে জানতে চাই, বাংলাদেশে আমাদেরকে বিভিন্ন শারীয়াহ বোর্ডে ডাকছে, আমরা যাবো কিনা? আমাদের দেশের সম্মানিত কিছু আলেম বিষয়টিকে নেতিবাচকভাবে দেখেন। শায়খ উত্তরে বললেন, ‘যদি যাওয়ার দ্বারা ফায়দা হয়, তারা পরিবর্তন হয়, তাহলে যাবেন। আর যখন দেখবেন তারা পরিবর্তন হচ্ছে না, কথা শুনছে না, তখন বের হয়ে আসবেন।’ সংক্ষিপ্ত সাক্ষাত শেষে শায়খের কাছ থেকে দোয়া ও বিদায় নিয়ে আমরা হোটেলে ফিরে আসি।
সামগ্রিকভাবে এই সফরে আমাদের পাকিস্তান সম্পর্কে জানার সুযোগ হয়েছে। করাচীর পথঘাট দেখে আমাদের দেশের ঢাকার মতো মনে হবে। মনে হবে একই শহর, এটাকে কেটে দুই ভাগ করা হয়েছে। কিছু ইন্সফ্রাকচার আছে, যেগুলো আমাদের ঢাকা থেকেও পুরনো। কিন্তু করাচীতে যেহেতু পোর্ট আছে, ফলে ওখানে অনেক বেশি বিজনেস। যদিও ইন্সফ্রাকচারাইজ এখানে অত উন্নত হয়নি। সফরটি আমাদের জন্য অত্যন্ত শিক্ষণীয় ছিল। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সেই শিক্ষাগুলো আমলে নেয়ার তাওফিক দিন। আমীন।
লিখেছেন-
ড. মুফতী ইউসুফ সুলতান
তারিখ: ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫