shutterstock_2007014807-scaled-1

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর শরীয়াহ নির্দেশনা

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর পরিচয় :

Investopedia তে এফিলিয়েট মার্কেটিং এর পরিচয় দেয়া হয়েছে,

Affiliate marketing is an advertising model in which a company compensates third-party publishers to generate traffic or leads to the company’s products and services. The third-party publishers are affiliates, and the commission fee incentivizes them to find ways to promote the company.

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হল একটি বিজ্ঞাপনের মডেল, যেখানে একটি কোম্পানি তার গ্রাহকদেরকে কোম্পানির পণ্য ও পরিষেবা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার জন্য তৃতীয় পক্ষ তথা প্রচারকারীদেরকে কমিশন প্রদান করে। এই তৃতীয় পক্ষের প্রচারকারীরা হল অ্যাফিলিয়েট, এবং কমিশন ফি তাদেরকে কোম্পানির প্রচারের উপায় খুঁজতে উৎসাহিত করে।

সহজ কথায়, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হল কোন কোম্পানির পণ্য বা পরিষেবা প্রচার করে বিক্রিত পণ্যের নির্দিষ্ট পার্সেন্ট কমিশন আয় করা। যেমন মনে করুন, কারো দারাজ অ্যাফিলিয়েট একাউন্ট রয়েছে। তার একাউন্টে প্রচার করা লিংকের মাধ্যমে দারাজের একটি ফ্রিজ বিক্রি হল, যার মূল্য ৫০,০০০ টাকা। সেক্ষেত্রে দারাজের সাথে তার চুক্তি যদি হয় ৪% কমিশনের, তবে উক্ত ফ্রিজ বিক্রয় থেকে তার আয় হবে ২০০০ টাকা।

বর্তমান সময়ে ব্লগার, ইউটিউবার এবং সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার এই পদ্ধতি ব্যবহার করে বিভিন্ন কোম্পানির প্রোডাক্ট এবং সার্ভিস তাদের নিজেদের প্লাটফর্মে প্রচার করে থাকে, বিনিময়ে তারা কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন পেয়ে থাকে।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে করে?

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে মৌলিকভাবে চারটি পক্ষ জড়িত থাকে। যথা :

  • অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক বা মার্কেটপ্লেস
  • অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার
  • বিক্রেতা বা পণ্য উৎপাদনকারী
  • ক্রেতা বা কাস্টমার

১. অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক বা মার্কেটপ্লেস :

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে মূল সম্পর্ক বিক্রেতা এবং অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারের মাঝে হলেও অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক বা মার্কেটপ্লেস সেখানে অভিভাবকের ভূমিকা পালন করে। পণ্য বিক্রয়কারী কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্যের বিক্রি বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে এসকল নেটওয়ার্কে অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম চালু করে। সেসব প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটাররা। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের জন্য বিভিন্ন অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক ওয়েবসাইট রয়েছে। বর্তমান সময়ে জনপ্রিয় কয়েকটি অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক হল CJ Affiliate, Amazon Associates, eBay Partner, Clickbank ইত্যাদি।

২. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার : যিনি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে আয় করতে চান।

৩. বিক্রেতা বা পণ্য উৎপাদনকারী : যারা তাদের পণ্যের বিক্রি বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্কে প্রোগ্রাম চালু করে এবং নির্দিষ্ট কমিশনের বিনিময়ে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারের মাধ্যমে পণ্যের প্রচারণা চালায়।

৪. ক্রেতা বা কাস্টমার : যারা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারের প্রচার করা লিংক থেকে পণ্য ক্রয় করে কিংবা পণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানির ওয়েবসাইট, বিজনেস পেইজ ইত্যাদি ভিজিট করে।

একজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার যখন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে চায়, তখন প্রথমত তাকে কোন একটি অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্কে অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। সেই একাউন্টের মাধ্যমে সে পণ্য বিক্রয়কারী কোম্পানির অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করে এবং একটি Tracking ID পায়। এরপর নিজের ওয়েবসাইট, ইমেইল, ইউটিউব চ্যানেল বা ফেইসবুক পেইজে উক্ত কোম্পানির পণ্যের মার্কেটিং করে ও লিংক শেয়ার করে। তার শেয়ার করা লিংকে যখন কোন কাস্টমার প্রবেশ করে তখন কোম্পানি Tracking ID দেখে মার্কেটারকে বুঝতে পারে ও বিক্রিত পণ্যের নির্দিষ্ট পার্সেন্ট কমিশন তাকে প্রদান করে।

পেমেন্ট নির্ধারণ পদ্ধতি :

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে মার্কেটারের পেমেন্ট বা কমিশন দুইভাবে নির্ধারণ হয়ে থাকে :

এক. মাসিক পেমেন্ট : অর্থাৎ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার তার ওয়েবসাইট, ইমেইল, ইউটিউব চ্যানেল বা ফেইসবুক পেইজে কোম্পানির পণ্যের মার্কেটিং করবে। বিনিময়ে কোম্পানি তাকে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ পেমেন্ট পাবে। প্রোডাক্ট সেল হোক বা না হোক।

দুই. সেল প্রতি কমিশন : অর্থাৎ শুধু মার্কেটিং করার দ্বারা কমিশন পাবে না, বরং পণ্য সেল হলে কমিশন পাবে। যত সেল হবে তত কমিশন।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে এই ২য় পদ্ধতিটিই অধিক ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই পদ্ধতিতে পেমেন্ট নির্ধারণ আবার তিন ভাবে হয়ে থাকে :

  • প্রতি সেল থেকে : মার্কেটারের দেয়া লিংক থেকে পণ্য সেল হলে তার নির্দিষ্ট পার্সেন্ট কমিশন মার্কেটার পাবে।
  • প্রতি ক্লিক থেকে : সেল হওয়ার প্রয়োজন নেই, শুধুমাত্র মার্কেটারের প্রমোট করা লিংকে ক্লিক করে কেউ যদি কোম্পানির ওয়েবসাইট ভিজিট করে তাহলেই মার্কেটার টাকা পাবে। এক্ষেত্রে কমিশন দেয়া হয় না, বরং ক্লিক প্রতি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দেয়া হয়। যেমন, নির্ধারণ করা হল প্রতি ক্লিকে ২৫ সেন্ট, তাহলে ৪ জন ক্লিক করলে পাওয়া যাবে এক ডলার।
  • প্রতি লিড থেকে : এর অর্থ হল, কেউ যদি মার্কেটারের দেয়া লিংক থেকে কোম্পানির ওয়েবসাইটে গিয়ে প্রোডাক্ট কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করে যেমন মেসেজ করল, পণ্যের দাম জানতে চাইল বা প্রোডাক্ট সম্পর্কে জানতে চাইল ইত্যাদি, তাহলে মার্কেটার টাকা পাবে।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে উপরোক্ত বিষয়গুলো জানার পরে এবার আমরা এর শরীয়াহ বিধান নিয়ে আলোচনা করতে পারি।

শরীয়াহ নির্দেশনা :

শরীয়াহ দৃষ্টিকোণ থেকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মাসিক পেমেন্ট পদ্ধতি হচ্ছে ‘ইজারা চুক্তি’ আর সেল প্রতি কমিশন এর তিনও প্রকার ‘দালালী চুক্তি’, যা মৌলিকভাবে বৈধ। শর্ত হল, এতে কোন শরীয়াহ নিষিদ্ধ বিষয় থাকতে পারবে না। অতএব, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে শরীয়াহ নির্দেশনা হল :

১. যেসকল কোম্পানি শুধুমাত্র হারাম পণ্য বা সেবা বিক্রি করে তাদের মার্কেটিং করা বৈধ নয়।

২. যেসকল কোম্পানি শুধু হালাল পণ্য কিংবা হালাল হারাম উভয় প্রকার পণ্য বিক্রি করে, তাদের হালাল পণ্যের মার্কেটিং করা বৈধ।

৩. মার্কেটিংয়ে পণ্যের গুণাগুণ বর্ণনার ক্ষেত্রে কোন প্রকার ধোঁকা ও প্রতারণা থাকতে পারবে না।

৪. বিজ্ঞাপন মিউজিক এবং অশ্লীল/অবৈধ ছবি সম্বলিত হতে পারবে না।

৫. পণ্য বিক্রয়কারী কোম্পানির সাথে অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের ‍সময় পেমেন্ট মেথড এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে যেন পরবর্তীতে বিবাদের সম্ভাবনা না থাকে।

৬. মার্কেটারের দেয়া লিংকে কোম্পানির ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে কাস্টমার যেসকল হালাল পণ্য ক্রয় করবে, তার কমিশন নেয়া বৈধ। হারাম পণ্যের কমিশন নেয়া বৈধ নয়। তাই হারাম পণ্যের কমিশন সাওয়াবের নিয়ত ছাড়া সকদা করে দিতে হবে।

লিখেছেন : মুহাম্মদ সানাউল্লাহ (CSAA)
তারিখ : ২৭/০৮/২৪ ইং

Share:

Facebook
Twitter
Pinterest
LinkedIn
Scroll to Top